~উগান্ডার সরকার ও নাগিরক সম্প্রদায় ~

by admin
217 views

উগান্ডার সরকার ও নাগিরক সম্প্রদায়

‘উগান্ডা’ শব্দটা আমাদের কাছে বেশ পরিচিত। বলা যায় ‘উপহাসের’ অথবা ‘তাচ্ছিল্য’র প্রতিশব্দ। কিন্তু বৈশ্বিক মানচিত্র ঘাঁটলে জানতে পারায় যাবে যে,এটা একটা দেশের নাম। অর্থাৎ আমরা কাউকে অথবা কোন দেশকে অপমান করতে কথায় কথায়উগান্ডারউগান্ডার দেশটার নাম ব্যবহার করি। তবে আমি মাঝে মাঝে ভাবি ঠিক যেভাবে উগান্ডা দেশটারে আমরা উপহাস করি সেভাবে অন্যকোন কোন দেশ অথবা অন্যকোন প্রান্তের মানুষজন বাংলাদেশকে উপহাস করছেনাতো? আমি হয়তো উগান্ডার নাগরিক হলে তাই করতাম।

কারণটা বলি তাহলে,
‘করোনাভাইরাস’ গত কয়েকমাস যাবত পৃথিবীজুড়ে এক আতংকের নাম। কিন্তু যখন মৃত্যুপুরী চীন, ইউরোপ থেকে প্রবাসী ভাইয়েরা নিজেদের অজান্তে এই ভাইরাসটি বহন করে আসতে লাগলো তখন আমাদের সরকার এটাকে গুরুত্ব সহকারে নেয়নি। কারণ হিসেবে বললো হযরতের দেশে এই ভাইরাস আক্রমন করার সাহস পাবেনা। এর কিছুদিন পরে পৃথিবীর অবস্থা আরো ভয়াবহ হলে সকল প্রবাসীদের কোয়ারান্টাইনে থাকতে বললো (যদিও কোয়ারান্টাইন কি মানুষ সেটাই বুঝতোনা) আর আমরা জাতি হিসেবে বাঙালী সুতরাং আইন প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের একটা গোয়ার্তুমী আছে। অতঃপর সরকার নতুন উদ্যেগ হিসেবে আমাদের ” ‘আমরা এবং তারা” দুই ভাগে বিভক্ত করলো। ‘আমরা’ মানে যারা দেশে অবস্থান করে আর ‘তারা’ মানে প্রবাসীরা। এজন্য প্রবাসীদের বাড়িতে বাড়িতে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দেওয়া হলো (লাল পতাকা মানে বিপদ সংকেত)। কিন্তু সরকার এটা টের পায়নি যে যারা আক্রান্ত ছিলো তারা এতোদিনে এটা সোসাইটিতে ছড়িয়ে দিয়েছে। অতঃপর দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আসমানীয় দূত হিসেবে এক আইডিসিআরের আর্বিভাব হলো। এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটি দুই একবার করে সংবাদ সম্মেলন করে দেশকে একেবারে উদ্ধার করে ফেললো। তারা সরাকারি উদ্যোগে আনতে পারেনি পর্যাপ্ত পরিমান করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার কীট। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যেগে হেল্পলাইন খোলা হলেও তখন কাজের কাজ কিছুই হয়নি।মাঝখানে তো তাদের নীতি ছিলো ‘নো টেস্ট, নো করোনা’।তারা আমাদের হজম করাতে চেয়েছিলেন যে দেশে করোনাভাইরাস নেই কিন্তু গত তিনদিনে টেস্টের পরিধি বাড়ানোতে পুরো চিত্রই ভিন্ন দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে গত চব্বিশ ঘন্টায় ১০০০ টেস্টের বিপরীতে ১১২ জন আক্রান্ত। তার মানে যতদিন যাচ্ছে অবস্থা ইতালির অনুরূপ হচ্ছে। কর্পোরেট ডাকাতেরা (গার্মেন্টস শিল্প) শ্রমিকদের জীবন নিয়ে যে ছেলেখেলা খেললো অদূর ভবিষ্যতে পরিণাম যে কতো ভয়ংকর তা কি দেশমাতা জানে?

জনগনের কথা বলার আগে আমি এই বাঙালী জাতিকে গিনেস বুকে জায়গা করে দেওয়ার জোর দাবি জানাই! এই জাতিকেই যখন ভীড় না জমাতে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলেছে তখন তারা মাস্ক পরে লাঠি দ্বারা মারামারি করে যাতে নিরাপত্তা ও সামাজিক দূরুত্ব বজায় থাকে(বাক্ষ্মণবাড়িয়ার ঘটনা)।

এটা সেই জাতি যারা বউয়ের সাথে বাইকে করে ঘুরে কোয়ারান্টাইন পালন করে (যমুনা টেলিভিশনে প্রচারিত ইতালির প্রবাসির ভিডিও)। জনগনগুলোর আরেকটা বিশেষ দিক হলো ‘ঈমানী অযুহাত’। মানে সচেতনতার কথা বলা হলে ঈমানের দোহাই দিয়ে বলে ‘খোদা যখন নিবে তখন এমনিতেই যামু’ (যদিও বড় আলেমরা সচেতন হতে বলেছেন)।
হতাশাজনক হলেও বাংলাদেশের আলেমরা মসজিদ সীমিত পরিসর করার সিদ্ধান্তটা দুই সপ্তাহ পরে হলেও দিয়েছে। কিন্তু গ্রামে কিছু উগ্র ধর্মান্ধরা আলেমদের কথা উপেক্ষা করে খামখেয়ালি আচরণ করছে।

সবশেষে বলি “গুজব” নিয়ে। বাঙালী জাতি হলো ‘গুজবপ্রিয়’ জাতি।চিল কান নিয়ে গেছে শুনে চিলের পেছনে দৌড়ে হয়রান হয়ে যাবে,তারা কানে হাত দিয়ে পরখ করে দেখবে না কান আছে কি না।

করোনাভাইরাস নিয়ে কয়েকটা গুজব : “থানকুনি পাতা খেলে করোনাভাইরাস সেরে যাবে”, ‘কালোজিরে হলো করোনাভাইরাসের ঔষুধ’ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর গুজব হলো ‘করোনাভাইরাসের আক্রান্তদের সরকার গুলি করে মেরে ফেলছে'( এটা গ্রামের মানুষ মনে প্রাণে বিশ্বাস করে) যার কারনে অসুখ হলে সত্যটা লুকাচ্ছে।
এভাবে চলতে থাকলে আগামী দশদিন পরে চিত্র হবে ইতালি,আমেরিকা, ফ্রান্স,স্পেনের মতো। জাতিসংঘের করা পরিসংখ্যান বলে বাংলাদেশ তিনকোটি মানুষ আক্রান্ত হবে এবং বিশ লক্ষ মানুষ মারা যাবে।
দিনশেষে এই জাতিটাই বলে আমরা করোনাভাইরাসের চেয়ে শক্তিশালী। উপহাস করলে উগান্ডা কে নয় এ জাতিটাকে করুন!

কবির ভাষায় বলা যায়, “বাঙলাদেশ যেনো এশিয়ান উগান্ডা”

লেখক ও স্যাটায়ারিস্ট: ইব্রাহীম রানা

Related Posts

Leave a Comment