~দুর্ভিক্ষ, দিনমজুরের জীবনযাপন ও সরকারের উদ্যোগ~

by admin
258 views

দুর্ভিক্ষ, দিনমজুরের জীবনযাপন ও সরকারের উদ্যোগ

আমদানি রপ্তানি মোটামুটি বন্ধ। শিল্প কারখানা যা অর্থনীতির এক বিশাল অংশ তাতেও নেমেছে ধস। প্রবাসীরা দলে দলে ফেরত আসছে। রেমিট্যান্স কমছে, ব্যায় বাড়ছে। খাদ্য সবাই মজুদ করছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে মানুষের টনক কিছুটা হলেও নড়বে। তখন কম সচেতন মানুষরাও ঘরে অবস্থান নিবে বাধ্য হয়ে। তখন সব কিছুর উৎপাদন কমবে,অভাব স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। এই নিয়ে সরকারের কোনো প্রস্তুতি আছে কি?

বিগত তিন মাস আগে চীনে করোনা ধরা পড়ে। আমাদের দেশের সরকার আগাম তিন মাস সময় পেয়েছিল প্রস্তুতি নেওয়ার,তবুও সরকারের খামখেয়ালীপনা স্বভাব আর দলীয় নেতা-কর্মীদের তোষামোদি দেশকে যে মরুভূমিতে পতিত করবে জনগণ টের পেয়ে গেছে। অশিক্ষিত বা অসচেতনরা না হয় ভাবতে পারে এটা চীনের উপর আসা আযাব আমাদের কাছে আসবেনা। কিন্তু সরকার কিভাবে উদাসীন ছিলো তা বরং পরিহাস্যই বটে! চিকিৎসা খাতে সরকারের প্রপার উদ্যোগ না নেওয়ার পাশাপাশি খাদ্য মজুদ না করে দেশকে যে আরো বড় মৃত্যুকুপে পরিণত করতে চলছে তা নিয়ে সরকারের কি মাথাব্যথা আছে কোনো? (সরকার যদি এটাকে নৈশভোট ভেবেও একটু সিরিয়াস হতেন আরকি)

এইযে মহামারী শেষে সামনে জলোচ্ছ্বাসের মতো ধেয়ে আসা দুর্ভিক্ষে এমন যেনো না হয়, যারা সমাজের ধনী শ্রেণীর তারা বস্তায় বস্তায় খাবার মজুদ রেখে মনের সুখে কোয়ারেন্টাইনে থাকবে আর একশ্রেণী না খেয়ে মরে।সরকারের অবশ্যই এইদিকে নজর দেওয়া উচিত যাতে অন্তত এই মহামারীকালীন সময়ে শ্রেণীবৈষম্য না তৈরী হয়।কারণ সমাজের যারা তথাকথিত গরীবশ্রেণী, তাদের শ্রমবলেই টিকে আছে এরাষ্ট্র,তাদের ঘামের প্রতিটা বিন্দু ধনকুবের ফুটানির খোরাক।তাঁদেরই যদি আমরা না বাঁচাতে পারি তাহলে রাষ্ট্রের উন্নয়নও শ্লথ হয়ে যাবে।কবির ভাষায় যদি বলি,
“নগর যখন পুড়ে, দেবালয় কি এড়ায় তাতে?”

সরকারের সরকারির চিকিৎসার প্রতি উদাসীনতার দরুণ যাদের টাকা আছে কিংবা যারা বিত্তবান, তারাই মোটামুটি চিকিৎসা পায়। আরেকদল অনেকটা বিনা চিকিৎসায় এমন কি হয়তো জানতেও পারবেনা তাদের করোনা হয়েছিলো কিন্তু মারা যায়। এই সমস্যা সমাধানে সরকার বিভিন্ন স্টেপ নিতে পারে।যেমন সবার ফ্রি টেস্ট।সচেতনতা। বা বাজারের পন্যের দামে লাগাম লাগানো। কিছু জায়গায় খাদ্যের সুষম বন্টন।

ফ্যাসিস্ট সরকারেদের একটা ভয় সবসময় থাকে। তারা যেকোনো ইস্যুতে মানুষকে দলবদ্ধ দেখলে ভাবে এই বুঝি তাদেরকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য সবাই জড়ো হয়েছে। তাই সমাজের অনেক তরুণ এগিয়ে আসতে চাইলেও বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। নদীর জল শুকিয়ে গেলে আমরা তখন আর নদীর যৌবন নিয়া আলোচনা করিনা, তখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে নদীর বুকে চর জেগে বিষয়ক।এইযে এখন দেশে মহামারি বিষয়ক যে দুর্যোগ চলছে, এতে সরকার যে ব্যর্থ, এর পরবর্তী সময়ে যে দুর্ভিক্ষ মানুষকে গ্রাস করতে আসছে, আমাদের আলোচনার ভাষা তখন মহামারী বিষয়ক সরকারের ব্যর্থতা ভুলে গিয়ে দুর্ভিক্ষের দিকে চলে যাব। এভাবেই ফ্যাসিস্টরা তাদের গতিপথ বদল করে নেয়।তবে মানুষ যখন মরতেই শিখে যাবে,তখন ভয়টা সরকারেই।অনেকগুলো ক্ষুধার্ত মানুষ যখন জড়ো হয়ে শ্লোগান দিয়ে বলবে,

“ভাত দে হারামজাদা
না হলে ক্ষমতা চিবিয়ে খাবো”

তখন?…

লেখক ও ফেমিনিস্ট: লামিয়া ইসলাম

Related Posts

1 comment

Jannatun Naim April 8, 2020 - 10:50 pm

আসলেই কথাগুলো যৌক্তিক ছিলো।

Reply

Leave a Comment