বাঙালী-যিশুর গল্প~
১. শূন্য উড়তে থাকা প্রজাপতিকে ক্যামেরাবন্দী করতে সহস্রবার ক্যামেরায় আঙুল চেপেছে পাগলাটে এক আলোকচিত্রশিল্পী। এরকম গল্প বলতে বলতে সিগারেটের সাথে দেশলাইয়ের যে রসায়ন, তা খুব সুচারুভাবেই সম্পন্ন করেছেন বাঙালী-যিশু।মাঝেমধ্যে নিজের সৃষ্টি কতোটা ভয়ানক হয়ে ওঠে নিজের জন্য -তা তো কেবল স্রষ্টারাই টের পেয়ে থাকেন। তবুও সৃষ্টি সুন্দর হলে সেটাই যে স্রষ্টাকে অবিনশ্বরতা দান করে থাকে, সে নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ নেই;
২.ফরাসিয়ান এক চলচ্চিত্র কবি (জঁ রনোয়া) যখন তার সৃষ্টিকর্মে প্রাণদানের জন্য ‘দ্য রিভার’ শুট্যিংয়ে কোলকাতায় আসেন,তখন তার সাথে দেখা মেলে বাঙালী যিশুর। সময়কাল তখন ১৯৪৯। এরপরের বছর যীশু নিজেই অবশ্য লন্ডনে পাড়ি জমিয়ে ভিত্তোরিও দে সিকার লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে (বাইসাইকেল থিভস) ছবিটি দেখেন। এগুলোই তাঁকে অনুপ্রেরণা জোগায় তাঁর নতুন সৃষ্টিকর্ম সৃষ্টি করতে। স্রষ্টারা এমনই, নতুন প্রাণের সন্ধানে নতুন নতুন জায়গায় তাঁদের অবাধ বিচরণ।
৩. স্রষ্টা মাত্রই আর্টিস্ট বা আর্টিস্ট মাত্রই স্রষ্টা। তাঁরা যখন ঘুমায় তখনও তারা শিল্পকে মুড়িয়েই ঘুমায়। এভাবে করে একদিন(১৯৫৫ সালে) বাঙালী-যীশু নিজেই তাঁর প্রথম সৃষ্টিকে তুলে ধরেন চলচ্চিত্র প্রাঙ্গণে। সৃষ্টির নাম দেন ‘পথের পাঁচালী‘।এরপর তাঁকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।একে একে ‘সতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ ‘চারুলতা’ ‘অপুর সংসার’ ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ‘হীরক রাজার দেশে’ সহ অদ্ভুত সব অমরকীর্তি নিজে হাতে সৃষ্টি করে ফেলেন বাঙালী-যিশু।
অবশ্য ‘পথরে পাঁচালী‘ আর ‘অশনি সংকেত‘ এই দুই সৃষ্টি তাঁকে কম পোড়ায়নি। প্রশংসা যখন পাহাড়সম হয়ে গিয়েছিলো,তখন সমালোচকেরা এই পাহাড়কে না বেয়ে একটু ধসানোর চেষ্টা করেছিলো। এই ধসানোর খেলা চলতে থাকাকালীন তাঁর ক্যারিয়ারের জুলিতে পুরষ্কারের ভারে বাঙালী-যিশুর খানিকটা কুঁজো হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার, আকাদেমি পুরষ্কার, দাদাগিরি ফালকে পুরস্কার কিম্বা ভারতরত্নসহ অসংখ্য দামী পুরষ্কার যার ক্যারিয়ারের জুলিতে সে তো নিশ্চয়ই তাঁর সৃষ্টি দিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করে রেখেছিলো তা নিয়ে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। তা নিয়ে সমালোচনা হতে পারে,তবে তাঁর সৃষ্টিকে তো কেউ অস্বীকার করতে পারেনি।
৪. গ্রেট আর্টিস্টরা সবসময় অন্য আর্টিস্টদের কাছে তপ্ত মরুভূমির বুকে একটুখানি ছায়ার মতোন। তাদের ছায়ায় কেউ কেউ আশ্রয় নিয়ে একদিন গাছ হয়ে ওঠে। বাঙালী যীশুও তেমনি একজন। তাঁর অদ্ভুত সব সৃষ্টিকর্মের ছায়াতে ওয়েস আন্ডারসন, মার্টিন স্কোরসেজি, জেমস আইভরি,ফ্রঁসোয়া ত্রুফোও কার্লোস সরার মতো একাধিক জগদ্বিখ্যাত তাবড়-তাবড় চলচ্চিত্র নির্মাতারা একটুখানি জিরিয়েছেন।
৫. নক্ষত্রেরও একদিন মরে যাওয়ার মতোই বাঙালী যিশুরও সময় ফুরিয়ে আসে আজকের এইদিনে। স্রষ্টা তাঁর অনেক-কাজ বাকি রেখেই থেমে যান। গ্রেট আর্টিস্টরা থেমে যায়,কিন্তু তাঁরা কখনো ফুরিয়ে যায় না। এইকারণেই স্রষ্টা অবিনশ্বর। হ্যাঁ আমি রয়ের কথা বলছি। “সত্যজিৎ রয়-নাম তো শুনা হোগা?”
লেখক: আহমেদ সাব্বির।
করোনা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পড়তে ক্লিক করুন। আইটি প্রতিদিনের সাথেই থাকুন।