হেভি মেটালের একাল-সেকাল

by admin
220 views

বাংলাদেশের হেভি মেটালের কিছু পরিচিতি

আমরা একটু সামনের দিকে যাই, ১৯৮০ সালের দিকে। সত্তর দশকে বাংলা রক গানগুলো রোমান্টিক ধাঁচের হালকা মেলডি ব্যাবহার করে তৈরি হচ্ছিলো। কিন্তু এই ধারাটা আশির দশকে এসে চেঞ্জ হয়ে যায়। তখন বাংলা রকের ভিতর হেভি মেটালের অল্প অল্প বাতাস বইতে শুরু করেছে। “ফিডব্যাক” তখন তাদের দুটি হার্ড রক এ্যালবাম “উল্লাস” এবং “মেলা” বের করে। ১৯৮৬ সালে মাইলস এর পারফর্মিং থেকে এই সময়টাতে হার্ড রক প্রচন্ড জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করে। প্রথম প্রথম মাইলস আয়রন মেইডেনের গানগুলো কভার করতে থাকে সেগুলো তখন তুমুল জনপ্রিয় হয়। কনসার্টে কনসার্টে তখন মাইলস আর আয়রন মেইডেন ভাসতো! হঠাৎ করে “রকস্ট্রাটা” নামে একটা ব্যান্ডের আবির্ভাব হয় হেভি মেটাল মিউজিক নিয়ে! যেখানে ওয়ারফেজ এর কিছু মেম্বার ছিলো। ৮০ সালের দিকে “ডিফারেন্ট টাচ” নিয়ে আসে “শ্রাবনের মেঘগুলো” এর মত প্রচন্ড জনপ্রিয় গান। এই সময়টাতে আইয়ুব বাচ্চু(LRB), তপন চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ শিল্পীরা তাদের ট্যালেন্ট জানান দিতে থাকে।
১৯৯০ সাল! এই সময়কে বলা হয় বাংলা রক মিউজের সব থেকে প্রডাক্টিভ সাল। ইতিমধ্যে রক মিউজিক মানুষের ভিতর যায়গা করে নিয়েছে। এই সময় পারফর্ম করে “LRB”, “Cryptic Fate”, “Ark”, “Maqsood o Dhaka” সহ বেশ কয়েকটা ব্যান্ড তখন জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করে। নব্বই দশকে “হুররে!” নামে একটা ব্যান্ড মিক্সড এ্যালবাম বের হয়। যেখান থেকেই মিউজিশিয়ানরা হেভি মেটালের দিকে ইন্সপায়ার পাওয়া শুরু করে। এই সময়েই মেইনস্ট্রিম ব্যান্ড ওয়ারফেজ “অবাক ভালোবাসা” এ্যালবাম রিলিজ করে । রকস্ট্রাটাও তাদের এ্যালবাম রিলিজ করে। আন্ডারগ্রাউন্ড এ তখন ক্রিপ্টিক ফেইট, Mysteria, Dethrow and PsychoDeth ইত্যাদি ব্যান্ডগুলো তুমুল জনপ্রিয়তায় হেভি মেটাল শো করছিলো। ১৯৯৪ সালে ক্রিপ্টিক ফেইট “Ends Are Forever” নামে একটি ইংরেজি হেভি মেটাল এ্যালবাম রিলিজ করে! এর মাঝেই বুয়েটের কিছু বন্ধুরা মিলে “শিরোনামহীন” নামে একটা ব্যান্ড তৈরি করে ফেলে!
এদিকে “তান্ত্রিক” নামে আন্ডারগ্রাউন্ডে তখন ভবিষ্যতের “আর্টসেল” পারফর্ম করে যাচ্ছিলো !

সেই সাথে অলটারনেটিভ ব্যান্ড “নেমেসিস”, “ব্ল্যাক” এর জন্মও হয় এই নব্বই দশকেই। এরপরের ইতিহাস বিংশ শতকের, ২০০০ সালের! তখন বাংলার আকাশে বাতাসে রকস্টারদের ঘনঘটা! Aurthohin ,Dalchhut, Shironamhin,Black, Artcell , Poizon Green, Kronic, Nemesis জনপ্রিয়তায় আকাশচুম্বী! যেখানেই কনসার্ট সেখানেই এরা আর সেখানেই রক আর হেভি মেটাল! এই সময়ে বেশ কিছু ব্যান্ডেরও জন্ম হয় যেমন Stentorian , Arbovirus , Shohortoli, De-illumination , Shunno and Band Lalon ইত্যাদি। ২০১০ সালের দিকে
Bangladesh Music Bands Association (BAMBA) ঢাকা শহরে ব্যান্ড কনসার্ট শুরু করে। তারপর তৈরি হয় পাওয়ারসার্জ,মেকানিক্স,মিনার্ভা ইত্যাদি থ্রাশ মেটালের মত কঠিন আর হেভি সব জনরার ব্যান্ড! এইতো ইতিহাস আমাদের! তারপরের ইতিহাস আপনারা সবাই দেখছেন,শুনছেন তাই আর বিস্তারিত গেলাম না!

হেভি মেটালের একাল-সেকালঃ (দ্বিতীয় অংশ)

সত্তরের দশকের প্রথমার্ধেই সাইকাডেলিক রকের প্রভাবে আরো বেশ কয়েকটি সাব-জন্রার প্রচলন হয়।এর মধ্যে তিনটি অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে ওঠে— প্রগ্রেসিভ রক, গ্ল্যাম রক এবং হার্ড রক। প্রগ্রেসিভ রকের কম্পোজিশনগুলো স্বভাবগতভাবেই একটু জটিল। প্রথাগত ৪/৪ টাইম সিগনেচারের বদলে প্রায়ই ৫/৮, ৭/৮ ব্যবহৃত হয়। গানে প্রায়ই একাধিক টেম্পো, কী-নোট বা টাইম সিগনেচার ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে গ্ল্যাম রকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয় স্টেজ অ্যাপেয়ারেন্সের প্রতি। ব্যবহার করা হয় জবরজং রংচঙে ঝিকিমিকি পোশাক-আশাক। আর হার্ড রক মনোযোগী হয় অ্যাগ্রেসিভ ভোকাল আর ডিসটর্শন টোন, বিশেষ করে গিটারের ডিসটর্শন টোনের প্রতি। এই জন্রাতে ইন্সট্রুমেন্টের মধ্যে গিটার-বেইস-ড্রামসের পাশাপাশি গুরুত্ব পেতে থাকে পিয়ানো আর কীবোর্ড-ও। এ সময়ের ব্যান্ডগুলোর মধ্যে প্রগ্রেসিভ রক ঘরানার “জেনেসিস, কিং ক্রিমসন, জেথ্রো, টুল”, গ্ল্যাম রক ঘরানার “অ্যালিস কুপার, কিস, টি-রেক্স, রক্সি মিউজিক”, এবং হার্ড রক ঘরানার “স্করপিয়নস, ডিপ পার্পল, গানস এন রোজেস, দ্য হু, অ্যারোস্মিথ, এসি/ডিসি” অন্যতম।

সত্তরের দশকের শেষার্ধে রকের আরেকটি সাব-জন্রা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে— পাঙ্ক রক। পরে এর প্রভাবে পাঙ্ক কালচারও গড়ে ওঠে। এই ধারার অন্যতম ব্যান্ড
“সেক্স পিস্তলস, ক্ল্যাশ, টেলিভিশন”। পরে আশির দশকে পাঙ্ক রকের প্রভাবে আরো কয়েকটি সাব-জন্রার প্রচলন হয়। সেগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় তিনটি ধারা হলো “নিউ ওয়েভ”, “পোস্ট-পাঙ্ক” এবং “হার্ডকোর পাঙ্ক”। এর মধ্যে “নিউ ওয়েভ” এবং “পোস্ট-পাঙ্কে”র প্রভাবে পরে গথিক রক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল মিউজিকের মতো জন্রার প্রচলন হয়…..

হেভি মেটালের একাল-সেকাল- (তৃতীয় অংশ)

আশির দশকের সবচেয়ে প্রভাবশালী সাব-জন্রা অল্টারনেটিভ রক। আর নব্বইয়ের দশকে তা একক জন্রার মতোই প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। অল্টারনেটিভ রকের প্রথম তারকা ব্যান্ড ‘নির্ভানা’। তবে এই দশকের শেষভাগ থেকে জন্রাটির জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। বিংশ শতকের শুরুতে এসে “ক্রিড, কোল্ডপ্লে, রেডিওহেড”-এর মতো ব্যান্ডগুলোর সাফল্য সাব-জন্রাটিকে আবার আলোয় নিয়ে আসে। রকের এই সাব-জন্রা থেকে আরো বেশ কয়েকটি সাব-জন্রা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো-
“গ্রুঞ্জ, ব্রিটপপ এবং ইন্ডি রক”।

আবার ষাটের দশকের শেষ দিকে রক মিউজিকের আরেকটি সাব-জন্রা তৈরি হয়, পরে যেটি অনেকটাই আলাদা জন্রা হয়ে উঠেছে। এই জন্রার গানগুলো আরো দ্রুত লয়ের, আরো উচ্চ নিনাদের, আরো উদ্দাম বিটের, আরো বেশি ডিস্টর্টেড, গিটার সলোর আধিক্য আরো বেশি। এক কথায় বললে, আরো বেশি পৌরুষদীপ্ত, আরো বেশি অ্যাগ্রেসিভ। হ্যাঁ, হেভি মেটালের কথাই বলা হচ্ছে। বা সংক্ষেপে মেটাল। ১৯৬৮ সালে ইংল্যান্ডে যাত্রা শুরু হয় তিনটি ব্যান্ডের। লন্ডনে লেড জ্যাপেলিন, বার্মিংহামে ব্ল্যাক স্যাবাথ, হার্টফোর্ডশায়ারে ডিপ পার্পল। এই তিনটি ব্যান্ডকেই মূলত হেভি মেটালের পাইওনিয়ারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
সত্তরের দশকের শুরুতেই আবির্ভাব ঘটে ‘জুডাস প্রিস্ট’-এর। এই জন্রায় ব্লুজের যে প্রভাব ছিল, জুডাস প্রিস্ট সেখান থেকে বের হয়ে আসে। সত্তর দশকের মাঝামাঝিতে এলো ‘মোটরহেড’। তারা জন্রাটিতে তখনকার ভীষণ জনপ্রিয় পাঙ্ক রকের ছোঁয়া নিয়ে আসে।

সত্তরের দশকের শেষে পাঙ্ক রকের জনপ্রিয়তা পড়তে শুরু করে। তরুণরা আরো অ্যাগ্রেসিভ কিছুর দিকে ঝুঁকতে থাকে। তার প্রভাব রক ঘরানায় তো বটেই, হেভি মেটালেও খুব ভালোভাবেই পড়ে। প্রচুর ব্যান্ড অ্যাগ্রেসিভ এই জন্রায় গান করতে শুরু করে। ১৯৭৯ সালে সাংবাদিকেরা হেভি মেটালের এই বিকাশকে বর্ণনা করেন “নিউ ওয়েভ অব হেভি মেটাল” হিসেবে। বিশেষ করে এই জোয়ারের দেখা মেলে ইউরোপে। টার্মটি পরে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এই সময়ে হেভি মেটালের নেতৃত্ব দেয়-
“আয়রন মেইডেন”, “স্যাক্সনের” মতো ব্যান্ডগুলো। এই দশকের শেষ ভাগ থেকেই মেটাল-ভক্তদের মেটালহেড এবং হেডব্যাঙ্গার্স বলার চল শুরু

হেভি মেটালের একাল-সেকালঃ (চতুর্থ অংশ)

আশির দশকে হেভি মেটাল আরো বিকশিত, আরো জনপ্রিয় হতে থাকে। এ দশকের শুরুতেই মেটালে ক্রু, পয়জন-এর মতো ব্যান্ডগুলোর হাত ধরে গ্ল্যাম মেটাল সাফল্য লাভ করে। এর পরেই আবির্ভাব হয় মেটাল গানের সম্ভাব্য সবচেয়ে জনপ্রিয় সাব-জন্রা—
হেভি মেটাল। হেভি মেটালকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে তোলে চারটি ব্যান্ড— মেটালিকা, মেগাডেথ, স্লেয়ার এবং অ্যানথ্রাক্স। এরই মধ্যেই এক শ্রেণির শ্রোতা তৈরি হয়ে যায়, যাদের চাহিদা আরো অ্যাগ্রেসিভ কম্পোজিশন। সেই ধারণা থেকেই থ্র্যাশ মেটালের প্রভাবে হেভি মেটালের আরো কয়েকটি সাব- জন্রার আবির্ভাব হয়। থ্র‍্যাশ মেটালের অন্যতম ব মধ্যে স্লেয়ার এবং এক্সোডাস ছিল একটু বেশিই এগ্রেসিভ। বিশেষ করে তাদের প্রভাবে প্রচলন হয় ডেথ মেটালের। ডেথ মেটালের পাইওনিয়ারের কৃতিত্ব দেওয়াও হয় “ডেথ” নামের ব্যান্ডটিকে। আশির দশকের শেষ দিকে “অবিচুয়ারি, মরবিড অ্যাঞ্জেল, নাপাম ডেথ”-এর মতো ব্যান্ডগুলো সাব-জন্রাটিকে আরো প্রতিষ্ঠিত করে। পরে ডেথ মেটালেরও বেশ কিছু সাব-জন্রা হয়ে যায়— মেলোডিক ডেথ মেটাল- (কারকাস, ইন ফ্লেইমস, ডার্ক ট্রাঙ্কুইলিটি, এট দ্য গেট, চিল্ড্রেন অব বডম, আর্চ এনিমি), প্রোগ্রেসিভ ডেথ মেটাল- (নাইল, এজ অব স্যানিটি, ওপেথ), ডেথ ডুম (অটোপসি), ডেথগ্রিন্ড (ব্রুজেরিয়া, গুট), ডেথকোর (সুইসাইড সাইলেন্স), ডেথ এন রোল (অ্যাভাটার, সিক্স ফিট আন্ডার) এবং ব্ল্যাকেন্ড ডেথ মেটাল (বেলফেগোর, বেহেমথ)।
ডেথ ডুমের সঙ্গে হেভি মেটাল-গথিক রকের মিশেলে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আসে আরেক সাব-জন্রা গথিক মেটাল। এই ঘরানার পাইওনিয়ার ধরা হয় “প্যারাডাইস লস্ট”, “মাই ডাইং” “ব্রাইড” এবং “অ্যানথেমাকে”। পরে “টাইপ এন্ড নেগেটিভ”, “গ্যাদারিং”, “থিয়েটার অব ট্র্র্যাজেডি” ব্যান্ডগুলো “বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট অ্যাস্থেটিক” প্রতিষ্ঠা করে (একই গানে অ্যাগ্রেসিভ পুরুষ ভোকাল ও সফট নারী ভোকাল)। পরে ক্র্যাডল অব ফিল্থ, মুনস্পেল, থিয়েটার দাস্‌ ভ্যাম্পায়ার্স এই সাব-জন্রার সঙ্গে ব্ল্যাক মেটালের মিশেল ঘটায়। এই ঘরানার অন্যান্য ব্যান্ডের মধ্যে লেকুনা কয়েল, এভেনসেন্স, পয়জন ব্ল্যাক অন্যতম…….

লিখেছেন : Ifty Ovin

Related Posts

Leave a Comment