ইউটিউব এর নাম আমরা কে না শুনেছি৷ ইউটিউব থেকে আয় আমাদের প্রতিদিনের বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ইউটিউব এখন শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে। বাড়ির বাচ্চাকাচ্চা থেকে শুরু করে বুড়ো বুড়ি সবার বিনোদনের জন্য এখন ইউটিউব একটি ভরসার নাম।আজকে আপনাদের শেখাবো ইউটিউব থেকে আয় করার সবথেকে সহজ পদ্ধতি.
ইউটিউব সারা বিশ্বে এতই জনপ্রিয় যে, প্রত্যেক ব্যবহারকারী ইউটিউবে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ মিনিট সময় ব্যয় করছে। নতুন এই ডিজিটাল বিনোদন মাধ্যমের সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে নতুন অভিনেতা ও ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে নতুন একটি পেশা হিসেবে গড়ে উঠছে ইউটিউবিং, অর্থাৎ ইউটিউব থেকে টাকা আয়।
আজকের এই লেখাটিতে আপনারা কিভাবে ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন শুরু করতে পারেন, ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন কি, ইউটিউব থেকে কিভাবে আয় করা যায় সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন শুরু করা যাক।
ইউটিউব থেকে আয়ের অর্থ কি?
ইউটিউব থেকে Earn, মানে এক কথায় ইউটউবে যারা বিজ্ঞাপন দাতা আছে তাদের থেকে প্রাপ্ত অর্থকে বোঝায়। সহজ ভাষায় বিজ্ঞাপন দাতারা আপনার ইউটিউব চ্যানেলে তাদের বিজ্ঞাপন দেবে। এর ফলে আপনি তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমানে টাকা পাবেন।
এছাড়াও ইউটিউব চ্যানেলের মেম্বারশিপ চালু করা, সুপার চ্যাট, পণ্য বিক্রি, ইউটিউব প্রিমিয়াম ইত্যাদির মাধ্যমেও আপনি গুগল থেকে আয় করতে পারবেন।
ইউটিউব থেকে টাকা আয় করবেন কিভাবে?
ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার জন্য সবার আগে আপনাকে একটি নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে। শুধু ইউটিউব চ্যানেল খুলে কন্টেন্ট প্রকাশ করলেই হবেনা, বরং চ্যানেলটিকে ইউটিউবের পার্টনারশীপ প্রোগ্রামে যুক্ত করতে হবে।
ইউটিউব চ্যানেল খুলে আয় করা কি বেশ সহজ মনে হচ্ছে? আসলে তা না! ইউটিউবে প্রতি মিনিটে ৪০০ এর বেশি ভিডিও আপলোড হয়। তাই বুঝতেই পারছেন প্রতিযোগিতা কতটা তীব্র।
ইউটিউব চ্যানেল কিভাবে খুলবেন?
ইউটিউব চ্যানেল চালু করা অত্যন্ত সহজ একটি প্রক্রিয়া। ইউটিউব চ্যানেল খুলতে কোনো টাকাও লাগেনা৷ ইউটিউব চ্যানেল খোলার জন্য একটি জিমেইল একাউন্ট ও প্রাথমিক কিছু তথ্য পূরণ করাই যথেষ্ট।
জিমেইল একাউন্টটি দিয়ে ইউটিউবে লগ ইন করতে হবে। এরপর প্রোফাইলে গিয়ে Create a Channel এ ক্লিক করলেই আপনার ইউটিউব চ্যানেল তৈরী হয়ে যাবে৷
ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে কিভাবে যুক্ত হবেন?
ইউটিউব থেকে অর্থ আয় করার জন্য সবার আগে ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে যুক্ত হতে হবে। ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়াকে অনেকে ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন বলে। ইউটিউব মনিটাইজেশনের মাধ্যমে আপনার ইউটিউব চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বসানো এবং বিজ্ঞাপন থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য কিছু প্রাথমিক শর্ত পূরন করতে হয়৷ সেগুলো হলো-
- চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা কমপক্ষে ১০০০ জন হতে হবে৷
- শেষ ১২ মাসে চ্যানেলটির ভিউ কমপক্ষে ৪ হাজার ঘন্টা হতে হবে৷
- ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে একটি গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট যোগ করতে হবে৷
এই শর্তগুলো পূরনের পর আপনি ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশনের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন৷
ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন কিভাবে চালু করব?
ইউটিউবের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন চালু করার পদ্ধতি নিচে বর্ণনা করা হলো-
- আপনার ইউটিউব একাউন্টের Profile এ ঢুকে Creator Studio তে প্রবেশ করতে হবে৷
- এরপর আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি সিলেক্ট করে Status and feature এ ক্লিক করতে হবে৷
- Monetization লেখাটিতে ক্লিক করুন।
- এরপর এটিকে Enable করে দিন।
- সর্বশেষে Confirm এ ক্লিক করে বের হয়ে আসুন।
ইউটিউব থেকে টাকা আয়ের প্রধান উপায়গুলো কি?
ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জনের জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে৷ তবে নির্দিষ্ট কিছু উপায় অবলম্বন করলে ইউটিউব থেকে অধিক পরিমানে টাকা আয় করা যায়৷ আসুন ইউটিউব থেকে টাকা উপার্জনের সেরা পদ্ধতিগুলো চটজলদি জেনে নেই-
গুগল ইউটিউব অ্যাডসেন্স
ইউটিউব থেকে অর্থ আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে গুগল ইউটিউব অ্যাডসেন্স। অ্যাডসেন্স থেকে টাকা আয় করার জন্য ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে যুক্ত হতে হবে। এক্ষেত্রে, আপনি যে জিমেইল দিয়ে অ্যাডসেন্স এর আবেদন করবেন সেখানে আপনার বয়স ১৮ এর বেশি থাকতে হবে। তাছাড়া আপনার চ্যানেলের একটি সুন্দর আইকন রাখা ভাল।
এফিলিয়েট মার্কেটিং
সহজ ভাষায় এফিলিয়েট মার্কেটিং অর্থ- অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ নিয়ে তাদের পণ্যের প্রচারণা করা। আপনার ইউটিউব চ্যানেলে আপনি বিভিন্ন পন্যের রিভিউ প্রদান করতে পারেন। এরপর ডেসক্রিপশন বক্সে পণ্যটি ক্রয়ের জন্য লিংক শেয়ার করতে পারেন। এখান থেকে যারা পণ্যটি কিনবে তার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা আপনি পাবেন৷
রিভিউ ভিডিও তৈরী
ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্যের রিভিউ ভিডিও তৈরী করে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা যায়। ভিডিও দেখে দর্শকেরা পণ্যটি সম্পর্কে জানবে৷ ফলে পণ্যটির প্রচারণা হয়ে যাবে। এতে কোম্পানি থেকে আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাবেন। মানসম্মত রিভিউ তৈরী করার মাধ্যমে দর্শকদের কাছে আপনি যতবেশি বিশ্বাসযোগ্য হবেন, আপনার রিভিউ দেখে পণ্য ক্রয়ের সংখ্যাও তত বাড়বে।
স্পন্সরড ভিডিও তৈরী
স্পন্সরড ভিডিও তৈরী করে ইউটিউব অ্যাড অথবা অ্যাফিলিয়েট লিংক এর চেয়ে বেশি অর্থ আয় করা যায়। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য ও সেবার বিক্রয় বাড়ানোর জন্য আপনার ইউটিউব চ্যানেলে পণ্য বা সেবাটি নিয়ে একটি স্পন্সরড ভিডিও তৈরী করার জন্য যোগাযোগ করবে। আপনি ঐ পণ্য বা সেবার বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা তুলে ধরে চ্যানেলে ভিডিও তৈরী করবেন।
ইউটিউব থেকে আয় বাড়ানোর উপায় আছে কি?
আপনাদের অনেকেই হয়তো আগেই ইউটিউব চ্যানেল খুলে ফেলেছেন। তবে সেভাবে ইউটিউব থেকে earn করতে পারছেন না। তাই এখন ইউটিউব থেকে income বাড়ানোর কিছু কৌশল আপনাদের সাথে আলোচনা করব।
মানসম্মত কন্টেন্ট নির্মাণ
আপনার চ্যানেলে ভিডিওর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ভাল মানের কন্টেন্ট তৈরী করতে হবে। না হলে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হতে পারবেন না। আপনার নিয়মিতভাবে মানসম্মত ভিডিও তৈরী করতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শেয়ার করা
আপনার ইউটিউব চ্যানেলে নতুন ভিডিও আপলোড করার পর সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম যেমন-ফেইসবুক, টুইটার, ম্যাসেঞ্জার ইত্যাদি সাইটগুলোতে ভিডিওটি শেয়ার করা যেতে পারে। এতে ভিউয়ার বাড়বে।
SEO টেকনিক ব্যবহার করা
Search Engine Optimization বা SEO হচ্ছে Google সহ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে কোনো ওয়েবসাইট প্রোমোট করার টেকনিক। SEO টেকনিক ব্যবহার করলে আপনার ভিডিওটি ইউটিউবের সার্চরেজাল্টের শুরুর দিকে জায়গা পাবে। ফলে বেশি পরিমাণে দর্শক ভিডিওটি দেখতে পারবে। এতে ইউটিউব থেকে আপনি বেশি টাকা আয় করতে পারবেন৷
ইউটিউব থেকে সর্বোচ্চ কত টাকা আয় করা সম্ভব?
ইউটিউব থেকে আপনি সর্বোচ্চ কত টাকা আয় করবেন সেটি কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারবে না। ইউটিউব থেকে আয়ের ব্যাপারটি মূলত নির্ভর করবে সাবস্ক্রাইবার কত, দর্শকদের সাথে ইন্টারেকশন কেমন এমন কিছু জিনিষ হিসাব করে।
ফোর্বসের তথ্যমতে, ২২.৪ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার সমৃদ্ধ চ্যানেল Ryan’s World এর ইউটিউব থেকে আয় ২২ মিলিয়ন ডলারের বেশি। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৮৫ কোটি টাকা!
বাংলাদেশ ও ভারতের বেশ কিছু ইউটিউবার ইতোমধ্যে ইউটিউবকে তাদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। ভালমানের ভিডিও কন্টেন্ট আপলোড করে জনপ্রিয় হোন। এরপর ইউটিউব থেকে প্রচুর পরিমাণ টাকা আয় করতে পারবেন।
ইউটিউব থেকে কিভাবে টাকা তোলা যায়?
ইউটিউব থেকে টাকা তোলা যায় গগুগল- অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে। অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে অর্থের পরিমাণ ১০ ডলার পরিমাণ হলে গুগল আপনাকে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে একটি চিঠি পাঠাবে। চিঠিতে একটি কোড থাকবে। অ্যাকাউন্টে ঢুকে সেই কোডটি ভেরিফাই করে নিতে হবে। পরবর্তীতে আপনার অ্যাকাউন্টে ১০০ ডলার জমা হলে গুগল আপনার প্রদানকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেবে।
শেষ কথা
আশা করছি ইউটিউব থেকে কিভাবে আয় করবেন তার বিস্তারিত ধারনা এই লেখা থেকে পেয়ে গেছেন। লেখাটি ভালো লেগে থাকলে সোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করে সবাইকে জানার সুযোগ করে দিন।
আমাদের অফিসিয়াল IT-Protidin পেইজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন