বর্তমানে নানা প্রয়োজনে আমাদেরকে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করতে হচ্ছে যার একদিকে যেমন আমাদের জন্য অনেক ফলপ্রসু আবার অন্যদিকে রয়েছে শঙ্খা। একদল অসাধু লোক আপনার ডিভাইসকে হ্যাক করে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য আপনার অজান্তে আপনার কাছ থেকে নিয়ে যাবে এমনকি আপনার ডিভাইস থেকে নানারকম ভূয়া তথ্য শেয়ার করে রীতিমতো আপনাকে বিপদে ফেলবে। এজন্য আপনার ডিভাইসকে এসমস্ত হ্যাকারদের থেকে রক্ষা করার জন্য কিছু টিপস আমরা শেয়ার করলাম।
ডিভাইস লক
প্রথমেই এই হালকা বিষয়টার উপর ই জোড় দিতে হবে। আমরা অনেকেই এই বিষয় টা নিয়ে ভাবি না।কিন্তু সিকিউরিটি এক্সপার্ট দের মতে, এই ডিভাইস লক ই হল একটি ফোনের সিকিউরিটির দরজা। আমরা সাধারনত ডিভাইস লকে স্লাইড ইউজ করি যা উচিৎ নয়। অবশ্যই পিন লক ব্যবহার করা উচিৎ। এবং যতটা সম্ভব বড় এবং বিভিন্ন সংখ্যা ও বর্নের কম্বিনেশনে পাসওয়ার্ড দেয়া উচিৎ। আপনি যত ছোট পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন, হ্যাকার দের তত সহজ হবে আপনার ফোনের পাসওয়ার্ড হ্যাক করতে। সেটা ক্রাক করে হতে পারে, ম্যালওয়ার ব্যবহার করে বা টুলস ব্যবহার করে। এই জন্য আপনি যত জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন, আপনার নিরাপত্তা তত বাড়বে। আর যদি সম্ভব হয় প্রতি সপ্তাহে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করুন। সেক্ষেত্রে হ্যাকারদের থেকে জাংক ফাইল ডিক্রিপ্ট করার সম্ভাবনা কমে যাবে।
ডিভাইস ম্যানেজার
এন্ড্রয়েড ফোনের চমৎকার একটা ফিচার এই ডিভাইস ম্যানেজার। এখান থেকে সঠিক সেটিংস করতে পারলে, ভাগ্য দোষে যদি আপনার ফোন হারিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আপনি আপনার ফোন ট্র্যাক করতে পারবেন, চাইলে ফোনের যাবতীয় তথ্য মুছে ফেলতে পারবে। এজন্য আপনাকে এন্ড্রয়েড এর সেটিং অপশন থেকে, সিকিরিটি তে যেয়ে ডিভাইস ম্যানেজার অপশনে যেতে হবে। সেখান থেকে Remotely locate this device, and Allow remote lock and erase, এই দুইটি অপশন অন করে রাখতে হবে।
ফাইল এনক্রিপশন
গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গুলোকে এনক্রিপ্ট করে রাখুন। তাহলে কোন কারনে Hacker আপনার ফোনের এক্সেস পেলেও ফাইল পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। এন্ড্রয়েড কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রচুর ভাবছে আর তাদের ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা দিতে তাদের সর্বশেষ ভার্সনে অটো এনক্রিপশন সিস্টেম আনতে যাচ্ছে। যেখানে ব্রাউজার এর মত সকল তথ্য নিজস্ব ফরম্যাটে এনক্রিপ্ট হয়ে থাকবে আর রিয়েল টাইম ডিক্রিপশনের মাধ্যমে দ্রুতগতি তে আপনাকে আপনার তথ্য দেখানো হবে। আপাতত ম্যানুয়ালি এনক্রিপশন ব্যবহার করুন।
অপরিচিত সোর্স থেকে সফটওয়্যার ইনস্টল
আমরা সাধারনত শেয়ার ইট ব্যবহার করে কোন বন্ধুর কাছ থেকে সফটওয়্যার নিয়ে ব্যবহার করি। কিন্তু এতে আপনার ফোনের সিকিউরিটি ওয়াইড ওপেন হয়ে যায়। এর মাধ্যমে আপনার বন্ধুর ফোনের কোন ম্যালওয়ার বা স্ক্রিপ্ট আপনার ফোনে চলে আসতে পারে, আর এটাই আপনার ফোনের বারোটা বাজাতে সক্ষম।এই ম্যালওয়ার/স্ক্রিপ্ট দিয়ে হ্যাকার রা আপনার ফোন সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রনে নিতে পারে। তাই হ্যাকারদের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ হবে শুধু প্লে স্টোর থেকে সফটওয়ার ব্যবহার করুন। আর প্লে স্টোরে যে সকল এপস এ verified play project সার্টিফিকেট দেয়া আছে শুধু সেগুলো ইউজ করুন। Hacker রা বিভিন্ন সফটওয়ার এর মধ্যে ম্যালওয়ার/স্ক্রিপ্ট ঢুকিয়ে বিভিন্ন জনপ্রিয় ওয়েবসাইটে ঢুকিয়ে দেয়। আর আমরা সে ফাদে পা ফেলি। তাই কখনই প্লে স্টোর বাদে সফটওয়্যার ডাউনলোড দেয়া উচিৎ না। আর ফোনের সেটিং থেকে allow installation from unknown sources এই অপশন টা অফ রাখবেন। তাহলে মনের ভুল হলেও কোন রিস্কি সফটওয়ার ফোনে ইন্সটল হবে না।
ডিভাইস হ্যাক হওয়ার কিছু অন্যতম মাধ্যম
ই-মেইল স্পাইওয়্যার প্রেরণের মাধ্যমে
অনেক সময় পরিচিত বন্ধুদের থেকে অপ্রয়োজনীয় ফাইল বা অ্যাপস্ এর ই-মেইল পেয়ে থাকেন। এ সবের মধ্যে কিছু হতে পারে, যা আসলে আপনার বন্ধুর ইমেইল অ্যাকাউন্টে পাঠানো স্পাইওয়্যার। যা কিনা আপনার বন্ধুর অজান্তেই, হ্যাকাররা আপনার বন্ধুর মেইল দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। আর একবার যদি এই স্পাইওয়্যার আপনার মোবাইল ডিভাইসে অথবা কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে, তবে হ্যাকার আপনার সকল তথ্য বিনা কষ্টে পেয়ে যাবে। আপনার অনান্য বন্ধুরা কিংবা ডিভাইসগুলো এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
রহস্যময় ইউএসবি ডিভাইস
টাইটেলে ‘রহস্যময় ইউএসবি ডিভাইস’দেখে নিশ্চয় অবাক হয়েছেন। আসলে আমরা যখন এলাকার লোকাল ক্যাফে কিংবা ভাসির্টির কম্পিউটার ল্যাবে যাই তখন অনেক সময় ছোট ছোট ইউএসবি ডিভাইস পাশে ঝুলানো বা পড়ে থাকে।
মাঝে মাঝে এমন হয় যে কেউ ভুলে রেখে গেছে আবার এমনও হতে পারে একজন Hacker ইচ্ছা করেই এটা রেখে গেছে। যেটা কিনা সম্পূর্ণ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত আর এটা দিয়ে যখন একটি ফাইল ওপেন করলেন আর ঠিক তখনই আপনার ডিভাইসটি ম্যালওয়্যার আক্রান্ত হয়ে আপনার সকল তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। সুতরাং, এ সব রহস্যময় ইউএসবি ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন এবং হ্যাকারদের থেকে রক্ষা করুন আপনার ডিভাইসকে।
ফ্রি ওয়াই ফাই হটস্পট
যখন আপনি একটি পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন, আসলে তা হটস্পট নামে পরিচিত। যদিও তা সুবিধাজনক, কারণ ফ্রি ব্যবহার করতে পারছেন। কিন্তু এটি আসলে Hacker এর জন্য বাঁধাহীন খেলার মাঠ, যেখান থেকে তারা সহজেই আপনার ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারবে।
প্রায় ৯০% পাবলিক ওয়াই-ফাই অনিরাপদ। সাধারনত বাড়িতে, আপনার ওয়্যারলেস রাউটার আপনার নেটওয়ার্ক এবং কম্পিউটার রক্ষা করার জন্য একটি ফায়ারওয়াল হিসাবে কাজ করে কিন্তু পাবলিক হটস্পটগুলিতে আপনার ডিভাইস হ্যাকারের আক্রমণের মুখে সম্পূর্ণরূপে অসহায়। সুতরাং, ফ্রি ওয়াই ফাই হটস্পট ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করুন।
পাসওয়ার্ড বিহীন ওয়াই ফাই
আপনার বাড়ির ওয়ারলেস রাউটারটিতে যদি কোন পাসওয়ার্ড না থাকে, তাহলে একজন Hacker খুব সহজেই তার সঙ্গে সংযুক্ত সকল ডিভাইসকে ট্র্যাক করতে পারবে। এটা আসলে পুরো পৃথিবীতে সকল হ্যাকারদের জন্য একটি ফ্রি আমন্ত্রণপত্রের মতন। কাজেই, নিরাপত্তার জন্য নিজের বাসার ওয়ারলেস রাউটারে পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখুন।
লেটেস্ট মোবাইল Redmi 10X সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন, আইটি প্রতিদিনের সাথেই থাকুন। যত দ্রুত সম্ভব নতুন নতুন তথ্য নিয়ে আমরা উপস্থিত হবো আপনাদের সাথে!